সতীর দেহত্যাগের পর দেবাদিদেব মহাদেব রনং দেখি মূর্তিতে সতীর নিথর দেহটাকে নিজ স্কন্ধে তুলে নিয়ে বেরোলেন বিশ্বপরিক্রমায়। স্বর্গ-মর্ত পাতাল কেঁপে উঠলো। সৃষ্টি বুঝি ধ্বংস হয়ে যায়। মহাদেবের রনং দেহি রূপ দেখে ও তাকে শান্ত করার উদ্দেশ্যে বিষ্ণু নিজ চক্র দ্বারা সতীর দেহ খন্ড বিখন্ড করলেন। সতীর দেহাংশ যেখানে পড়েছিল,সেইস্থানে এক একটি পীঠস্থান হলো। সতীর মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য শিবও বিভিন্ন নামে এইসব মহাপিঠে এক একটি ভৈরব রূপে আবির্ভাব হলেন।
ত্রিপুরাতেও শিব ত্রিপুরেশ ভৈরব রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। আজও এই ত্রিপুরেশ ভৈরব ভক্তগণের নিকট মহাতীর্থস্থান। ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়পুর শহরের অদূরে মাতাবাড়িতে অনুচ্ছ ঢিলার উপর অবস্থিত এই পীঠস্থান। এখানে পতিত হয় দেবীর দক্ষিণ পাদ। দেবীর নাম ত্রিপুরসুন্দরী। ভৈরব হলেন ত্রিপুরেশ।
ত্রিপুরেশ্বরী দেবীর প্রস্তরময় মূর্তিটি কষ্টিপাথরে খোদাই করা। তিনি সবহৃদি পরে দন্ডায়মান। চারিখানি হাত। হাতে বরাভয়,অসি ও নরমুণ্ড সভা পাচ্ছে। গলায় দোদুল্যমান নৃমুণ্ডমালা। দেবীর জ্বিহাটি কিন্তু রক্তবর্ণ নয়। তার কারণ হলো- দেবী কালী মূর্তি নয়, ষোড়োশীমূর্তি। এনি তৃতীয় মহাবিদ্যারূপে পূজিতা হন। তন্ত্র মতে ষোড়শী রূপেই তাঁর পূজা চলে আসছে।
ত্রিপুরার শেষ স্বাধীন রাজা ছিলেন শ্রীযুক্ত বীরবিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুর। ইনি মহাপ্রয়াণ করার পূর্বে দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে ১১৫৬ ত্রিপুরাব্দে ১৬ ই বৈশাখ ত্রিপুরেশ্বরীকে একটি রুপার ত্রিশূল প্রদান করে গেছেন। সেটি দেবীর দক্ষিণ ভাগে আজও বিদ্যমান। দেবীর দক্ষিণ ভাগে আরও একটি ছোট মূর্তি আছে ,ইনি ছোট মা নাম সবার কাছে পরিচিত। মন্দিরের পূজকগণ এঁকে চণ্ডীরূপেই পূজা করেন।
দেবীর পূজা সম্পূর্ণ তন্ত্র মতেই হয়। দেবীকে তৃতীয় বিদ্যা অর্থাৎ ষোড়শীরূপে পূজা করা হয়ে থাকে। মায়ের বেদীপিঠে কালিমন্ত্র থাকায় দেবী কালীকার ধ্যান করা হয় এবং মায়ের কাছে দেবী চন্ডীর ছোট মূর্তিটি আছে সেজন্য চন্ডীর ধ্যান করা হয়। এখন ধর্মপ্রাণ ভক্তগণ মাকে যেরূপে কল্পনা করবেন,দেবী ভক্তকে সেইরূপেই অভীষ্ট প্রদান করবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন