মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০২০

লগ্নে অবস্থিত গ্রহফল ( অতি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা )

লগ্নে অবস্থিত গ্রহফল


রবি - লগ্নে রবি অবস্থান করলে জাতব্যক্তি স্বল্পকেশযুক্ত, ক্রোধী, নিরুৎসাহী, অলস, কর্কশ, দীর্ঘকার, বলিষ্ঠ শরীর, নেত্ররোগী, নির্ঘৃন ও ক্ষমাগুন রোহিত হয়। মেষলগ্নে রবি থাকলে জাতক চক্ষুরোগী ও ধনী হয়। মেষলগ্নেযোগ দৃষ্টিহীন রবি অবস্থান করলে ব্যাক্তি সাধারণ আকার বিশিষ্ট, উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন, অভিজাত, বিত্তশালী বংশজাত, সাহসী ও ধনবান হবে। সিংহলগ্নগত রবিতে নিসান্ধ, তুলালগ্নগত রবিতে ধনহীন ও অন্ধ এবং কর্কট লগ্নগত রবিতে চক্ষুতে 'ফুলি' রোগগ্রস্ত হবে। ধনুলগ্নে রবি অবস্থান করলে জাতব্যক্তি ভাগ্যবান, ধার্মিক ও ঈস্বরশক্তি পরায়ণ হয়ে থাকে।
পূর্বোক্ত ফলসমূহ জাতকের জীবনে সাধারণভাবে বিচার্য। রবির শত্রু, মিত্র, নিচ প্রভৃতি ক্ষেত্রে অবস্থান এবং শুভাশুভ কারকতা অনুসারে উপরিউল্লেখিত ফলের বৈষম্য লাভ হয়। রবি দুঃস্থানপতি হয়ে লগ্নে অবস্থান করলে এবং শুভ সম্পর্ক না করলে সম্পূর্ণ অশুভ ফল দান করবে। অর্থাৎ কেন্দ্র বা ত্রিকোনপতি হয়ে লগ্নে তুঙ্গ ও মিত্র গৃহে শুভ গ্রহের সহিত সম্পর্কে শুভফল দান করবে। রবি-বৃহস্পতি যুক্ত বা দৃশ্য হলে ও চন্দ্রের দৃষ্টি রবির উপরে থাকলে এবং বুধ যুক্ত রবি সর্বসময় শুভফলদাতা হয়।

চন্দ্র - মেষ, বৃষ ও কর্কটলগ্নগত হলে জাতকের দয়াদাক্ষিণ্য সদগুণ এবং রূপ সৌন্দর্য,  সম্পদ,ভোগ প্রভৃতি প্রদান করে। অন্যান্য লগ্নে নীচতা, চঞ্চল চিত্ততা, উন্মত্ততা, বধিরতা প্রভৃতি উৎপন্ন করে থাকে। খীণচন্দ্র স্থলে বিশেষরূপে এই সমস্ত ফল উৎপন্ন হয়ে থাকে।
চন্দ্র মেষ, বৃষ, ও কর্কট যেকোনো রাশিতে লগ্নগত হলে, জাতব্যক্তি অধার্মিক, ক্ষীণদেহী , নির্ধন, বুদ্ধিহীন ও বধির হয়। পূর্ণচন্দ্র লগ্নগত হলে জাতব্যক্তি তেজস্বী ও অহংকারী হয়। ক্ষীণচন্দ্র লগ্নস্ত হলে প্রস্রাব্ পীড়া গ্রস্ত এবং ক্লান্তিহীন হয়।
লগ্নস্থ চন্দ্রের এই সাধারণ ফলের ভাবপতিগ্রহের কারকতানুসারে বৈষম্য হয়ে থাকে। বৃহস্পতি যুক্ত বা দৃষ্ট চন্দ্র সর্বসময় শুভফলদাতা। পক্ষান্তরে ক্ষীণচন্দ্র দৃষ্ট বা যুক্ত পাপগ্রহগণ অধিক পাপফল দান করেননা। পাপগ্রহগণ চন্দ্রের প্রভাবে আংশিক শুভফল দান করে থাকে। ক্ষীণচন্দ্র তৃতীয়, অষ্টম, একাদশ বা দ্বাদশপতি হয়ে পাপপীড়িত হলে বালরিস্টি হয়। এবং দৈবাৎ বেঁচে থালেও চিররোগী হয়।
চন্দ্র পাপযুক্ত বা দৃষ্ট হয়ে লগ্নের সঙ্গে সম্মন্ধ করলে জলমগ্ন হবার সম্ভাবনা থাকে। বৃষলগ্নে চন্দ্র অবস্থান করলে জাতকের অসাধারণ মনোবল জন্মে থাকে। জাতকের অবশ্যই সম্মান ও পরাক্রম বৃদ্ধি হয়ে থাকে। ভ্রাতাভগিনীর দিক থেকেও জাতক সুখী হয়।

মঙ্গল - সচারচর মঙ্গল লগ্নে অবস্থান করলে মতিভ্রম, হঠকারীভাব, ক্ষতযুক্ত শরীর, সাহস ও উগ্রতা দান করে। লগ্নে মঙ্গল থাকলে জাতক অর্শ, ভগন্দর রোগী ও বিকল মহুমাযুক্ত উদোর রোগী হয়।
লগ্নস্থ মঙ্গল ছেলেবেলায় অজীর্ণপীড়া, দন্তরোগ, কৃষাঙ্গ, শ্লেষাধাতুযুক্ত, পাপরায়ণ, খলচরিত্র হয়। বন্ধন ভয় এবং দ্বন্দ্ব ও অগ্নিভয় হয়। জাতকের স্ত্রী, পুত্রহানি, শির ও নেত্রপীড়া হয়। জাতক সিংহের ন্যায় কর্মোদ্যমী হয়, কিন্তু তার যেকোনো কাজ করবার পরে ফললাভের সময় নানাপ্রকার উপসর্গ উপস্থিত হয়ে মনকে তাপিত করে থাকে।
লগ্নভাবগত মঙ্গলের অশুভ ফলসমূহ কেবলমাত্র বলবান বৃহস্পতির শুভ যোগ বা দৃষ্টিতে হ্রাস পায়। অন্যকোনো শুভগ্রহ মঙ্গলের অশুভ ফলকে হ্রাস করতে পারেনা। বরং মঙ্গলের প্রভাবে শুভ গ্রহ পতিত হয়ে মঙ্গলের অশুভ প্রকৃতি লাভ থাকে। রবিযুক্ত লগ্নভাবগত মঙ্গলে দাম্ভিক, চন্দ্রযুক্ত মঙ্গলে ক্রোধী, বুধ যুক্ত মঙ্গলে কূটনীতিবিদ, শুক্রযুক্ত মঙ্গলে কামুক, শনি ও রাহুযুক্ত মঙ্গলে গুন্ডা প্রকৃতি, কেতুযুক্ত মঙ্গলে বিষদাতা হয়। কেবলমাত্র স্বক্ষেত্র, তুঙ্গ, মূলত্রিকোণগত এবং বৃহস্পতির ক্ষেত্রগত লগ্নস্থ মঙ্গল শুভ ফলদাতা হয়। সিংহলগ্নে মঙ্গল পরিলক্ষিত হলে জাতব্যক্তি শারীরিক দিক থেকে অবশ্যই শক্তিশালী এবং প্রভাশালী ব্যাক্তি হবে। সে ভাগ্যের উপর অবস্থাশীল হবে। মকরলগ্নে মঙ্গলস্থিত হলে জাতব্যক্তি জাঁকজমকের সঙ্গে জীবনযাপন করবে।

বুধ -  জ্যোতিষশাস্ত্র মতে লগ্নে বুধ অবস্থান করলে জাতব্যক্তি শান্তি, উদার, বিনীত, ধীর, সদাচারী, বিদ্বান, কলাবিশারদ, ও একাধিক সন্তানযুক্ত হয়ে থাকে।
লগ্নভাবগত বুধ গ্রহ দোষজনিত  রিষ্টি নাশ করে। জাতব্যক্তি তীক্ষ্ণধীসম্পন্ন, মসিজীবী, কান্তিমান, এবং চিকিৎসা বিদ্যায় প্রাজ্ঞ হন। কিন্তু জাতকের ব্যাধির আক্রমণ হলে চিকিৎসায় সহসা আরোগ্য লাভ হয়না। জাতব্যক্তি সম্পদশালী, বিদ্বান, তপোপরায়ণ ও সর্বধর্মনুরক্ত হয়। বুধের শুভ এবং পাপ অবস্থান ভেদে স্বক্ষেত্র, মূলত্রিকোণ, তুঙ্গ ক্ষেত্রাদিতে  অবস্থানে এবং ভাবপতির কারকতানুসারে শত্রু মিত্রাদি গ্রহযোগ বা দৃষ্টিহেতু উপরি উল্লেখিত সাধারণ ফলভোগের বৈষম্য ঘটে থাকে।
আমাদের দেশীয় মতে বলা হয়ে থাকে যে, শুভগ্রহযুক্ত বুধ শুভ ফলদাতা এবং পাপগ্রহযুক্ত বুধ পাপফলদাতা হয়। মঙ্গলযুক্ত লগ্নভাবগত বুধে দুষ্টবুদ্ধিপরায়ণ, বিরুদ্ধ সমালোচক এবং কূটনীতিবিশারদ হয়। চন্দ্রযুক্ত বুধে মেধাবী, স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন ও কান্তিমান হয়। রবিযুক্ত বুধে সত্যানুসন্ধান প্রিয় ও প্রাজ্ঞ। বৃহস্পতিযুক্ত বুধে তীক্ষ্ণধী। শুক্রযুক্ত বুধে সুলেখক ও বাগ্মী। শনিযুক্ত বুধে চিন্তাশীল, দুর্বল। পক্ষান্তরে, বুধ ষষ্ঠ, অষ্টম, দ্বাদশপতি হয়ে লগ্নে থাকলে, যথাক্রমে ষষ্ঠ পতিতে শত্রু সৃষ্টির বুদ্ধি, অষ্টমতিতে আত্মধ্বংসের বুদ্ধি এবং দ্বাদশপতিতে অপব্যয়ের বুদ্ধি সৃষ্টি করে।
কন্যালগ্নে জাত ব্যাক্তির জন্মসময়ে বুধ লগ্নে অবস্থান করলে অতিসুভ ফলপ্রদান করে থাকেন। কন্যালগ্নে বুধ পরিলক্ষিত হলে জাতকের শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। পিতার বিষয়ে, সরকারি পৃষ্টপোষকতায় ক্ষেত্রে, চাকরি তথা ব্যাবসার ক্ষেত্রে অর্থ, সুখ, সম্মান, সহযোগিতা এবং উন্নতি সূচিত হয়। মিথুনলগ্নজাত ব্যাক্তির ও লগ্নে বুধ থাকা খুব শুভ। জাতক মেধাবী, কলাবিদ, সৌম্য ও সন্তানসুখে সুখী হয়। এদের রোগ সহজে হবেনা। কিন্তু রোগ হলে জটিল আকার নিয়ে থাকে।

বৃহস্পতি - লগ্নে বৃহস্পতি থাকলে মানব মর্যাদা সম্পন্ন, প্রাজ্ঞ, উদার, রাজপ্রিয়, শান্ত, সুশ্রী, চারুদেহ,, ভোগী, দানি ও সদাশয় ব্যাক্তি হন। বৃহস্পতি লগ্নভাগত হলে জাতক পন্ডিত হয় এবং জনহিতকর কর্মগুণে খ্যাতিলাভ করে। জাতব্যক্তি দিব্যকান্তিযুক্ত, সুখী, সুন্দর ও স্বল্পবীর্যযুক্ত হয়। সে ন্যায়নীতিজ্ঞ ও ধার্মিক হয়। তার অন্তরাত্মায় সৎচিন্তা স্থান পায়। পারলোকিক জ্ঞানমুক্তিই তার ভবিষৎ চিন্তা হয়। তার ধনসম্পদ ভোগের নিমিত্ত ব্যায় হয়। জাতব্যক্তি কবি, সঙ্গীতপ্রিয়, দানশীল, সুচিপরায়ণ, সৌম্যদর্শন, ভোক্তা, রাজা বা শ্রেষ্ঠজন পূজিত, দেব ব্রাম্ভন সেবা পরায়ণ, নীতিজ্ঞ এবং বিত্তশালী হয়।
বৃহস্পতি লগ্নে অবস্থানভেদে ও বলাবল অনুসারে উপরি উল্লেখিত ফলের বৈষম্য সৃষ্টি করে থাকে। দ্বিতীয় ও পঞ্চমপতি বিধায় বৃহস্পতি বৃশ্চিক লগ্নের ষষ্ঠ, ও নবমপতি বিধায় কর্কটলগ্নে, নবম ও দ্বাদশপটি বিধায় মেষলগ্নের পক্ষে শুভপ্রদ। আবার চতুর্থপতি হিসেবে ধনুলগ্নের লগ্নপতি ও দশম পতি হিসেবে মিনলগ্নের এবং পঞ্চমপতি ও অষ্টমপতি হিসেবে সিংহলগ্নের পক্ষে বৃহস্পতি নিরপেক্ষ গ্রহ হিসেবে গণ্য হয়। অনুরূপভাবে দ্বিতীয়পতি ও ষষ্ঠ পতি হিসেবে কুম্ভলগ্নের, তৃতীয় ও ষষ্ঠ পতি হিসেবে মকরলগ্নের, চতুর্থপতি ও দ্বাদশপতি হিসেবে কন্যালগ্নের, সপ্তমপতি ও দশম পতি হিসেবে মিথুনলগ্নের এবং অষ্টমপতি ও একাদশপতি হিসেবে বৃষ লগ্নের পক্ষে বৃহস্পতি অশুভপ্রদ হয়ে থাকে। বৃহস্পতি দোষযুক্ত হয়ে লগ্নে থাকলে জাতক দাম্ভিক ও অত্যাচারী হয়ে থাকে। কিন্তু বৃহস্পতি সর্বতোভাবে শুভ ও পুন্যগ্রহ হওয়ায় সে যেকোনো অবস্থায় থাকুক না কেন , তার প্রকৃতিগত শুভফল হতে অধিক বৈষম্য ফল সৃষ্টি করেন না।
নিচক্ষেত্রস্থ, শত্রুগৃহগত, পাপযুক্ত বা পাপপ্রভাবিত বৃহস্পতি লগ্নে থাকলে পূর্ণ শুভফল দান করতে না পারলেও, পাপগ্রহের মতো সম্পূর্ণ অশুভফল দান করেননা। পরলোকের দিগ্দর্শন করায়। দুর্বল পাপগ্রহ পীড়নের বৃহস্পতি লগ্নে থাকলে জাতকের প্রজ্ঞাকে বলিষ্ঠ না করলেও তাকে ধর্মভীরু করায়। অন্তরে অসাধু প্রেরণা সৃষ্টি হলেও তা স্বল্পাংশেই কার্যে পরিণত হয়। অস্থির ও অবাবস্থিত চিত্তের জন্য তাকে সময় সময় অসাধু প্রেরণা অন্যায় কার্যে কতকাংশে প্রেরণা যোগায়। রবি ও চন্দ্রের বল থাকলে, দুর্বল বৃহস্পতির অসাধু প্রভাব অধিকাংশ দমিত হয়ে থাকে। সেই জাতক আত্মনিগ্রহ এবং আত্মবিশ্লেষনের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতির দুর্বল নীতিকে বলিষ্ঠ করে তুলতে পারে। বৃহস্পতি অন্তর্গত, শত্রুগৃহগত, ও পাপপীড়িত এবং ষষ্ঠ, অষ্টম ব্যায়পতি হয়ে লগ্নে থাকলে জাতকের প্রকৃতির ভিতরে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। জাতক নীতিজ্ঞান বর্জিত হয়ে বিবেকহীন হয়। সে লোভপরায়ণ, স্বল্পমেধাযুক্ত, স্বীয় বুদ্ধির দোষে শত্রু সৃষ্টিকারী, বুদ্ধিভ্রম, দুষ্কৃতকারী এবং অযথা অমিতব্যয়ী হয়। এইসকল কর্মের ভিতরেও তার কিছুটা ধর্মভাব প্রচ্ছন্ন থেকে যায়।
রবির দীপতাংশরহিত বৃহস্পতি, চন্দ্র ও বৃহস্পতি, মঙ্গল ও বৃহস্পতির যোগ বা দৃষ্টি লগ্নে থাকলে, বৃহস্পতির স্বকীয় গুনের পূর্ণবিকাশে সক্ষম হয়। লগ্নে বুধযুক্ত বৃহস্পতি মেধাবী ও স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন, শুক্রের প্রভাবে রজঃ ও সত্ত্বগুণী এবং ভোগী, শনির প্রভাবে ত্যাগী, রাহুর প্রভাবে বৃহস্পতির চণ্ডনীতিপরায়ণ দোষ জন্মে।

শুক্র - লগ্নে বা প্রথমভাবে শুক্র অবস্থান করলে জাতক প্রিয়দর্শন, শ্রীযুক্ত ও মিষ্টভাষী হয়ে থাকে। বহুবিধ বিদ্যায় তার অধিকার জন্মে। বিপরীত লিঙ্গের নারী বা পুরুষ সহজেই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে।
শুক্র লগ্নস্থ হলে, জাতক সুন্দর কান্তিযুক্ত হয়। জাতক বহু নারীসুখ ভোগ করে থাকে। সে রজগুনের সাধনার মধ্য দিয়ে পারলৌকিক আদর্শ গ্রহণ করে। জাতক বিভিন্ন সদনুষ্ঠানে অনুরক্ত হয়ে থাকে। কাব্বশাস্ত্রাদি, যোগ্যনিষ্ঠ ও ধার্মিক হয়। সে শিল্পকলাভিজ্ঞ হয়। দুর্বল, পাপ পীড়নের শুক্র লগ্নগত হলে উপরি উল্লেখিত ফলের বৈষম্য হয়। দুর্ব শুক্রের প্রভাবেও জাতক সাহিত্য, সংগীত, ও শিল্পবিজ্ঞানে খ্যাতিলাভ করে থাকে। কিন্তু তার ঐসকল সাধনার ভিতরে কামভোগের আতিশয্য থাকে। তার বহু নারীসঙ্গ লাভেও অতৃপ্ত কামনা বাসনা থেকে যায়। এ প্রসঙ্গে লগ্নে পাপশুক্র এমনকি তুঙ্গ শুক্র থাকলেও অতিরিক্ত যৌনাচার বশত যৌনরোগের সম্ভাবনা থাকে।

শনি - লগ্নে শনি থাকলে জাতক অসন্তুষ্ট, অতিলোভী, স্থূলদৃষ্টি, ও দুরাকাঙ্খী হয়ে থাকে। এরূপ জাতক জাতিকা সচারচর অপরের উন্নতিতে ঈর্ষাকাতর হয় এবং কষ্ট পায়। লগ্নে যোগ দৃষ্টি ছাড়া শনি অবস্থান করলে জাতকের দেহ হবে দীর্ঘ, কৃষ্ণবর্ণ, বিকৃত দন্ত, ক্ষীণ, ধীর স্বভাব ও এদের দাম্পত্য জীবনে বাধা উৎপন্ন হয়।
লগ্নে শনির দৃষ্টি পড়লে দাম্পত্য জীবন অশান্তিময় হবেই। সনাতন শাস্ত্র অনুসারে - শনি লগ্নভাবগত হলে জাতব্যক্তি প্রভূত ধনি হলেও তার দুরাশায় বা অতৃপ্ত আকাঙ্খায় সে সর্বদা চিন্তাক্লিষ্ট, স্তুলদৃষ্টিসম্পন্ন, বুদ্ধির জড়তায় সুক্ষবিচারে অসমর্থ থাকে। জাতক মানসিক অশান্তি ভোগ করে এবং পরশ্রীকাতর দোষ তার চরিত্রে প্রভাব বিস্তার করে বলে ক্ররদৃষ্টি সম্পন্ন বা বিষদৃষ্টিযুক্ত হয়। গ্রহদোষ সমূহ চরিত্রে থাকায় জাতকের চিত্ত সর্বদা উদ্বিগ্ন থাকে।
লগ্নভাবগত শনির শত্রু-মিত্র গৃহে অবস্থান, ভাবপতির কারকতা, শুভ এবং পাপগ্রহের প্রভাবভেদে উপরি উল্লেখিত ফলের বৈষম্য হয়। তুলা, ধনু, মীন রাশিগত লগ্নস্থ শনিতে জাতককে রাজতুল্য ক্ষমতা দান এবং ভাগ্যবান করে থাকে। ইহা ব্যাতিত স্বক্ষেত্র, মূলত্রিকোণগত, কেন্দ্র বা ত্রিকোনপতি হয়ে লগ্নে থাকলে অধিকাংশ শুভ ফল দান করে থাকে। শনি নৈসর্গিক পাপগ্রহহেতু ভাবপতি হিসেবে বলবান থাকলেও, যদি কেন্দ্র বা ত্রিকোণে শুভ গ্রহের বল না থাকে বা শুভ গ্রহ প্রভাবিত না হয়, তাহলে শুভ ফলের মধ্যে আংশিক অশুভফল দান করবে। লগ্নস্থ শনিতে বাত, বায়ুপীড়া এবং অনিদ্রার কারণ সৃষ্ট হয়।

রাহু - রাহু লগ্নে থাকলে জাতক শত্রুজয়ী, অসাধু বুদ্ধিসম্পন্ন, স্বজন বঞ্চক, কামপ্রবণ, রুগ্নদেহী ও শিরোরোগী হয়। স্ত্রী থাকলেও উদ্দাম যৌনকামভোগ স্পৃহা থেকেই যায়। স্ত্রী হেতু সে সন্তাপ ভোগ করে থাকে। মেষ, কর্কট ও সিংহ লগ্নস্থ রাহু স্বর্ণ জাতীয় মূল্যবান সম্পদ লাভ করায়। পঞ্চম-নবম বা চতুর্থ-দশম ভাগ্যত বলবান শুভ গ্রহের অবস্থানে লগ্নগত রাহুর অশুভ ফল কতকাংশে প্রশমিত হয়। রাহু রাজযোগের কারক হলেও নৈসর্গিক পাপগ্রহহেতু লগ্নে থাকলে পরপীড়ণের মধ্য হতে রাজযোগের ফললাভ করে ক্ষণকাল ক্ষমতার দম্ভ প্রকাশের পর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। শুভ গ্রহের প্রভাব ব্যাতিত রাহুর অশুভ প্রভাব প্রশমন করা সম্ভব নয়। মেষ হতে কন্যা লগ্নে রাহু থাকলে গ্রহরিষ্টি নাশ করে। কিন্তু অন্য লগ্নে থাকলে রাহু কারক ব্যাধির সম্ভাবনা। রাহুকারক ব্যাধি - আত্মহত্যার ইচ্ছা, অজীর্ণরোগ, ও আকস্মিক পীড়া।

কেতু - কেতু লগ্নে থাকলে, জাতক ভ্রাতা ও বন্ধুগণের সহিত বিবাদ করে থাকে। অসাধু প্রকৃতির লোক কর্তৃক জাতক সর্বদা ভীত এবং উদ্বিগ্ন চিত্ত থাকে। তার নানাপ্রকার বায়ুজনিত পীড়া ভোগ হয়। তুলা, মকর ও কুম্ভ লগ্নগত রাহু কতকাংশে শুভফলদাতা হয়। অশুভ কেতু লগ্নে থাকলে বায়ু ও উদর রোগের  সম্ভাবনা। লগ্নস্থ নীচস্থ কেতু বিদেহ মুক্তির অন্তরায়।


























কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন