শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

করতলের রং বিচারে হস্তবিচার পদ্ধতি

 করতলের রং সাদা হলে:-

ফ্যাসফ্যাসে সাদা রক্তিম আভাও নেই- এই ধরণের হাত স্বল্প রক্তপ্রবাহ সূচিত করে। যাদের হাতের চামড়া খুব ভারী অবশ্য তাঁদের হাতের রংও  এধরণের সাদা হতে পারে- কিন্তু রক্তপ্রবাহ যদি ঠিক থাকে সেক্ষেত্রে সাদার ভেতরে রক্তিম আভা পরিলক্ষিত হবে। নারীর হাত স্বভাবতই অপেক্ষাকৃত একটু বেশি সাদা হয়ে থাকে, কিন্তু শরীর অভ্যন্তরস্থ রক্ত প্রবাহ ঠিক থাকলে -সেক্ষেত্রেও রক্তিম আভা ফুটে উঠবে। কিন্তু হাতের রং যদি একেবারে সাদা হয়- তবে তা রক্তপ্রবাহ জনিত স্বল্পতা ও নির্জীবতা সূচিত করে। হাতের রং যাদের একেবারে সাদা -স্বভাবতই তাঁদের মধ্যে উত্তাপ, সজীবতা এবং আকর্ষণশক্তির অভাব সূচিত হয়ে থাকে। এঁরা সব বিষয়েই নির্জীব ধরণের হয়ে থাকে। রক্ত সরবরাহ জনিত স্বল্পতা বা ত্রূটির জন্য শারীরিক দিক থেকেও দুর্বল হয়ে থাকে। সাদা রঙের হাত যাদের তারা সচারচর স্বপ্নাচারী, রহস্যজনক, উদ্যমহীন, স্বার্থপর, এবং কল্পনাবিলাসী হয়ে থাকেন। দৈহিক মিলন বা ভালোবাসার ক্ষেত্রে এরা অনেকাংশে নির্জীব ধরণের নিষ্ক্রিয়। কবি, সাহিত্যিক হিসেবে অবশ্য কৃতী হতে পারেন। এদের মন কল্পনা রাজ্যে ঘুরে বেড়াবার ব্যাপারে বিশেষ সক্রিয় হলেও দেহের ভূমিকা তেমন সক্রিয় নয়। ধর্মীয় ব্যাপারে এদের ভূমিকা রহস্যজনক, ব্যাবসায়ী হলেও এদের বন্ধুর সংখ্যা কম, সামাজিক মেলামেশারও এঁরা পক্ষপাতী নন। এইধরণের হাতযুক্ত ব্যাক্তিগন যদি বৃহস্পতি প্রভাবাধীন হন - তবে উচ্চাশার সঙ্গে হতাশা, নির্জীবতা, এবং কুসংস্কার মিশ্রিত হয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। বৃহস্পতির পর্বতটি যদি অত্যন্ত উন্নত ও পুষ্ট হয় - তবে এই ধরণের হাতযুক্ত ব্যাক্তি অত্যাচারী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেন। অন্যান্য গ্রহ প্রভাবাধীন ব্যাক্তির ক্ষেত্রে সাদা ধরণের হাতের রং- অনুরূপ মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে।

হাতের করতলের রং লালচে হলে---
হাতের তালুর রং স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যবস্থা সূচিত করে। এক্ষেত্রে শরীরের অভ্যন্তরস্থ রক্তের শ্রেণী উত্তম বিবেচিত হয়ে থাকে। হাতের তালুর রং যাদের লালচে- তাঁরা সজীব, উদ্দমযুক্ত এবং সতেজ। শারীরিক দিক থেকে এঁরা সবল, রোগব্যাধি এঁদের সহজে কাবু করতে পারেনা। এঁরা উজ্জ্বল, আকর্ষণীয়, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং ভালোবাসার ক্ষেত্রেও স্বাভাবিক উপযুক্ত। এঁরা আশাবাদী, সহৃদয়, উদার এবং সহানুভূতিপ্রবণ এবং অপরের দুঃখে কষ্টে বিচলিত হয়ে থাকেন। এঁরা অপরকে উৎসাহিত করেন, অনুপ্রাণিত করেন। লালচে রং যেকোনো গ্রহের প্রভাবাধীন ব্যাক্তির ক্ষেত্রে উত্তম বিবেচিত হয়ে থাকে। যদিও চন্দ্র এবং শনি প্রভাবাধীন ব্যাক্তিগনের ক্ষেত্রে হাতের তালুর সাদা ও পীত রংই স্বাভাবিক, সেক্ষেত্রে হাতের তালুর রং লালচে হওয়ায় তাঁদের নির্জীবতা এবং বিষন্নতার মধ্যে হঠাৎ আলোর ঝলকানি সূচিত হতে পারে, এবং জীবন সন্মন্ধে তাঁদের হতাশা অনেকাংশে বিদূরিত হতে পারে। যেকোনো দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখা যাক- হাতের তালুর এই লালচে রং বিশেষ শুভকর। 

হাতের করতলের রং যদি লাল হয় -
হাতের তালুর রং যদি লাল হয়- তবে তা অতিরিক্ত রক্তপ্রবাহ, অতিরিক্ত উত্তাপ, অতিরিক্ত জীবনীশক্তি ও দৈহিক শক্তি সূচিত। করে যাঁদের হাতের তালুর রং যদি লাল হয় - তাঁদের দৈহিক শক্তি বেশি হওয়া স্বাভাবিক এবং তাঁরা অপেক্ষাকৃত বেশি সতেজ ও সজীব। 
বৃহস্পতির প্রভাবাধীন ব্যাক্তির হাতের তালুর রং যদি লাল হয় - তবে উচ্চাশা, গর্ব এবং প্রভুত্বপ্রিয়তার সঙ্গে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত সজীবতা যুক্ত হয়। রবি প্রভাবাধীন ব্যাক্তির হাতের তালুর রং যদি লাল হয়, তবে তার প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রে উদ্যম থাকলেও সুক্ষ রুচিবোধের অভাব লক্ষিত হবে। শুক্র প্রভাবাধীন ব্যাক্তির হাতের তালুর রং যদি লাল হয় - তবে ব্যাক্তিটি অতিরিক্ত কামাবেগসম্পন্ন হবেন। আর মঙ্গল প্রভাবাধীন ব্যাক্তির হাতের তালুর রং লাল হলে- ঐ ব্যাক্তির ভালোবাসায় আরও বেশি উত্তাপ সংযোজিত হবে এবং লোকটি আরও বেশি যুদ্ধবাজ হয়ে উঠবেন। তাছাড়া অতিরিক্ত ভোজনের ফলে ঐ ব্যাক্তির মাথাঘোরা বা সন্ন্যাসরোগে আক্রান্ত হতে পারে। বৃহস্পতি প্রভাবাধীন ব্যাক্তির হাতের তালুর রং লাল হলেও অনুরূপ রোগ সূচিত হতে পারে। আর নৃশংস ধরণের হাতের শুক্র পর্বতটি বড়, আঙুলগুলি বেঁটে এবং ভারী বা মোটা, হাতের তালু কঠিন, বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠটি গদাকৃতি তালুর রং লাল হয়, তিনি আরও বেশি খুনে বা নৃশংস হয়ে উঠবেন। 

হাতের করতলের রং হলুদ হলে-
রক্তে পিত্তঘটিত দশ থাকার ফলেই হাতের রং হলদে হয়ে যায়। রক্তে অতিরিক্ত পিত্তকণা মিশ্রিত হলে ত্বকের স্তরেও তা জমা হয় এবং সেই জন্যেই হাতের তালুর রং হলুদ দৃষ্ট হয়ে থাকে। কারণ পিত্তের রং হলুদ। পিত্তকণা রক্তে সঞ্চারিত হওয়ায় রক্তপ্রবাহ ধারায় তথা মস্তিষ্কে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বিরক্তি সূচিত করে থাকে এবং হৃদযন্ত্রকে দুর্বল করে থাকে। যাঁদের রক্ত পিত্তদোষের দ্বারা দূষিত তাঁরা কখনই উৎফুল্ল তেমন সুখী হতে পারেনা। সর্বদা বিষাদগ্রস্ত অবস্থা বিদ্যমান থাকায় জীবনের অন্ধকার দিকটাই তাঁর সামনে ভেসে ওঠে। ফলে যাঁদের হাতে তালুর রং হলদে- তাঁরা অসামাজিক হয়ে পড়েন। তাঁরা বৃহস্পতি প্রভাবাধীন হলেও কমবেশি বিষাদগ্রস্ত ও হতাশার শিকার অবশ্যই হয়ে থাকেন। অনুরূপভাবে অন্যান গ্রহ প্রভাবাধীন ব্যাক্তিগনের ক্ষেত্রেও হাতের তালুর রং হলদে হলে কমবেশি বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটবেই। বুধ প্রভাবাধীন ব্যাক্তির হাতের তালুর রং হলুদ হলে তিনি আরো বেশি নার্ভাস হয়ে পড়বেন। শুক্র প্রভাবাধীন ব্যাক্তির দৈহিক শক্তি হ্রাস পাবে, চন্দ্র প্রভাবাধীন ব্যাক্তি আরও বেশি বিপন্ন হবেন। মঙ্গল প্রভাবাধীন ব্যাক্তির হাতের তালুর রং হলদে হলে - তাকে সহ্য করা মুশকিল। (জন্ডিস জনিত কারণে হলদে রং সূচিত হলে তা সাময়িক)

হাতের করতলের রং নীল বেগুনী হলে-
রক্তসরবরাহ জনিত ত্রূটির কারণেই হাতের তালুর রং নীল বা বেগুনি হয়ে থাকে। যাদের হাতের তালুর রং সাদা তাঁরা নির্জীব ধরণের, লালচে রং স্বাভাবিক অবস্থার পরিচায়ক, লাল রং অতিরিক্ত রক্ত সরবরাহ সূচিত করে, হাতের তালুর হলদে রং দূষিত রক্তসূচীত, আর হাতের তালুর রং নীল শ্লথ গতিতে রক্ত প্রবাহ সূচিত করে অতএব যাঁদের হাতের তালুর রং নীল বা বেগুনি তাদের হৃদযন্ত্রটি সচারচর দুর্বল হয়ে থাকে। যাঁদের হাতের তালুর রং নীল বা বেগুনি তাঁদের নখ পরীক্ষা করলে হৃদরোগের সূচক চিহ্নদি দেখা যেতে পারে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন