মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৮

লগ্নের বিচারে জাতক ও জাতিকার ভাববিচার

লগ্নের বিচারে জাতক ও জাতিকার ভাববিচার

এখানে আমরা ১২টি লগ্নের জাতক জাতিকার কর্মস্থান ও বিবাহ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। তারপরে সমগ্র বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করবো।

মেষ লগ্নের জাতক ও জাতিকার কর্মজীবন 

মেষের কর্মপতি হলেন শনি।  কর্মজীবনে মেষের লোকেরা সজাগ হয়।  শনির সঙ্গে মঙ্গলের সম্পর্ক ভালো নয় তাই কর্মজীবনে মেষের লোকেরা একটু সেন্টিমেন্টাল হয়।  তাই কথায় কথায় চাকরি বা কর্মস্থান ছেড়ে আবার নতুন কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার , বিল্ডিং কন্ট্রাক্টর, ইট প্রস্তুতকারক , কৃষি ও মৃত গবেষণাকেন্দ্রে, ঐতিহাসিক খনন কার্য , মনোবিজ্ঞানী, ঔষধ প্রতুত্কারক ইত্যাদি বিভাগের সাথে যুক্ত হয়ে  এরা জীবিকা অর্জন করে থাকে। তবে এদের জেদি মনোভাবের জন্যে কর্মজীবন পরিবর্তনশীল হয়।  এবং সাময়িক বেকার হতে পারে।  সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রকার কাজে এদের দেখা যায়।

বিবাহ 

শুক্র হলেন পত্নিকারক গ্রহ।  মেষের সপ্তমে তুলা আর তুলার অধিপতি হলেন শুক্র।  শুক্র শুভ হলে জাতক সুন্দরী , তন্নী, সাস্থবতী, লাবণ্যযুক্তা, গৃহকর্মে নিপুনা, সঙ্গীত , সাহিত্য , নৃত্য , গীত , বাদ্য , বিলাসী পত্নী লাভ করে। এদের দাম্পত্য জীবন ভালোই কাটে। তবে শুক্র অশুভ হলে দাম্পত্য জীবন সুখের হয় না।  মেষের জাতকের একাধিক বিবাহ হতে পারে।  তবে বিবাহের সময় এদের অশান্তি হতে পারে। ২৭ বছর বয়সের মধ্যে বিবাহ হলে শুভ।

বৃষ লগ্নের জাতক জাতিকার কর্মজীবন

বৃষলগ্নের অধিপতি হলেন শুক্র।  শুক্র আবার শনির বন্ধু।  বৃষলগ্নের জাতকদের কর্মস্থান হলো কুম্ভু রাশি। আর কুম্ভের অধিপতি হলেন শনি।  তাই বৃষের জাতক জাতিকারা যদি বিদ্যাদেবীর কৃপা লাভ করে তাহলে তারা দার্শনিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার , প্রফেসর , গবেষক ইত্যাদি হয়ে জীবনে কৃতিত্ব লাভ করতে পারে।  আর এই শ্রেণীর জাতকদের শিক্ষায় যদি তেমন উন্নতি না হয় তাহলে তারা সৃষ্টি ধর্মী কাজে নিযুক্ত হতে পারে।  মেকানিক, শ্রমজীবী, কৃষিকার্যে অনুরক্ত হন।  আর এরা ধাতু, কয়লা, লোহালক্কড় , চা, টায়ার, খনিজ দ্রব্য প্রভৃতির ব্যাবসায় উন্নতি করতে পারে।  তবে শুক্র ও শনি অনুকূল হলে।  তাই এরা জীবনে কখনো বেকার বসে থাকেনা। কোনো না কোনো কাজের দ্বারা জীবিকা অর্জন করে।

বিবাহ

এই লগ্নের জাতক ও জাতিকার সপ্তম ঘরের মালিক হলেন মঙ্গল। বৃষের সপ্তম হলো বৃশ্চিক রাশি। এই রাশিতে মঙ্গল থাকলেও দশ হয় না।  এবং সুখে শান্তিতে দাম্পত্য জীবন কাটাতে পারে।  কারণ মঙ্গল ও শুক্রের যোগ ভালো এবং সম্পর্ক এতে ভালো হয়।  তবে এই শ্রেণীর জাতকের প্রণয় ঘটিত বিবাহ ও একাধিক বিবাহ জীবনে হতে পারে।  কিন্তু বৃশ্চিক রাশিতে শনি ভিন্ন অন্য পাপগ্রহ থাকলে বিবাহিত জীবন বিষময় হয়ে উঠতে পারে।  পাপগ্রহ বলতে শনি, মঙ্গল, রাহু, কেতু ও রবি কে বোঝায়।

মিথুন লগ্নের জাতক জাতিকার কর্মজীবন

মিথুনের কর্মপতি হলেন বৃহস্পতি। তিনি ধনু ও মীনের অধিপতি।  বুধ ও বৃহস্পতির সম্পর্ক ভালো নয়।  তাই মিথুনের কর্মজীবন বৈচিত্রময় হতে পারে। এরা একই কর্মে বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনা। কর্ম ত্যাগের পূর্বেই আবার নতুন কর্ম পেয়ে যায়।  তাই এদের কর্মজীবনে তেমন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়না।

বিবাহ
মিথুন লগ্নের সপ্তমপতি হলেন বৃহস্পতি। আবার বুধ বৃহস্পতি কে মোটেই দেখতে পারে না। তাই এই লগ্নের জাতক যদি পুরুষ হয় তাহলে সে তার স্ত্রী কে সহ্য করতে পারেনা আবার এই লগ্নের জাতক যদি স্ত্রী হয় তাহলে সে স্বামীকে সহ্য করতে পারেনা।  ের যেকোনো নিজেরই হোক না কেন একাধিক প্রেম এবং একাধিক নারী পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়। কখনো বা প্রণয় ঘটিত কপট প্রেমে বদনাম ও পতিত হতে পারে।

কর্কট লগ্নের জাতক জাতিকার কর্মজীবন

কর্কটের কর্মস্থানের অধিপতি মঙ্গল।  তাই কর্কট জাতকদের পক্ষে মঙ্গল কোনপতি।  মঙ্গল তাই জাতক জাতিকার একদিকে কোনপতি।  তাই মঙ্গলের একটা প্রভাব জাতক জাতিকার জীবনে পড়ে।  মঙ্গল যদি পুষ্টি , স্বক্ষেত্রী , অথবা মিত্রগৃহজাত হয় তাহলে জাতকের কর্মজীবন শুভ হয়।  মঙ্গলের আনুগত্য পেলে ের জল পুলিশ , নাবিক, জাহাজ , জলজ দ্রব্যের ব্যাবসায়ী , শাসন বিভাগের কাজ প্রভৃতির একটি ধারণ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।  মঙ্গল অশুভ থাকলে বৃত্তির পরিবর্তন হয়।

বিবাহ

কর্কটের জাতক জাতিকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রণয় ঘটিত অসবর্ণ বিবাহ হয়ে থাকে।  তবে যদি সপ্তম স্থানে মাকার রাশিজাত  বৃহস্পতির শুভ দৃষ্টি থাকলে সামাজিক বিবাহ হতে দেখা যায়। চন্দ্রের কোনো শত্রু নেই।  কিন্তু শনি চন্দ্রকে বিশেষ সুনজরে দেখে না।  তাই দাম্পত্য জীবনে উল্লেখযোগ্য কিছু না হলেও মাঝে মাঝে অশান্তি হতে পারে। এদের সাধারণত ২২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে বিবাহ শুভ বলে মনে করা হয়।

সিংহ লগ্নের জাতক জাতিকার কর্মস্থান

সিংহের জাতক জাতিকাদের কেন্দ্র ও কোনপতি হলেন শুক্র ও বৃহস্পতি। তাই এদের রাশিচক্রে বৃহস্পতি যেভাবেই থাকুক না কোনো এদের কিছু সুফল সিংহের জাতক জাতিকারা পাবেনই। শুক্র হলেন এদের কর্মদাতা। আবার শুক্রের সঙ্গে রবির সম্পর্ক ভালো নয়।  তাই ের সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হলে কর্মস্থল, কর্মস্থলের বন্ধুবান্ধব ও কর্মের ধারা পাল্টিয়ে।  ফেলে।  এরা ভীষণ সেন্টিমেন্টাল ও জেদি হয়।  আবার এদের মধ্যে সরলতা ও পরোপকারী মনোভাব এত বেশি হয় যে জীবনে বহুবার এদেরকে নানা ভাবে কর্ম ও পারিপার্শিক জীবনে ঠকতে হয়।  মিল, কারখানার  পরিচালক,এডমিনিস্ট্রেটর দক্ষ কর্মী হিসেবে খ্যাতি  অর্জন করতে পারে। সৃষ্টিমূলক কাজেও ভালো ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। এরা ভালো পোশাক ও পরিচালক ও বটে।  তাই তারা আশ্রিত বৎসল হয়।

বিবাহ

সিংহের সপ্তম হলো কুম্ভরাশি। কুম্ভ পতি হলেন শনি, শনি রবির সুত হলেও শত্রু।  তাই সিংহের দাম্পত্য জীবন বিশেষ সুখকর হয়না।  সপ্তমে শুভগ্রহের  প্রভাব থাকলে সামাজিক বিয়ের হয়।  অন্যথায় প্রণয় ঘটিত অসবর্ণ বিবাহ হতে পারে।  কখনও বা লগ্নে, দ্বিতীয়, সপ্তমে ও অষ্টমে পাপগ্রহ থাকলে একাধিক বিবাহ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়।  তাদের মধ্যে  ও বাকিগুলি অসামাজিক বিয়ে হতে পারে।  পত্নীপীড়ায় এদের যথেষ্ট অর্থ নষ্ট হয়।  এবং পত্নীর স্বাস্থ বিশেষ ভালো হয়না।  সিংহের জাতক অপেক্ষা তার পত্নী কম সুন্দর হয়।  বয়স কম হলেও পত্নীকে অধিক বয়স্স্কা  বলে মনে হয়।  তবে এদের পত্নী ধর্মশালা ও পতিব্রতা হয়।  ২১ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে বিবাহ শুভ।

কন্যা লগ্নের জাতক জাতিকার কর্মস্থল

কন্যার অধিপতি বুধ তাই কন্যার জাতকদের কর্ম ও জন্মের মধ্যে বুধের প্রভাব থাকবে তাতে সন্দেহ নেই।  কন্যার জাতকেরা কিছুটা দ্বমোনা ভাব যুক্ত হয়ে থাকে।  একটি কাজ করতে করতে ভাবে অন্য কাজটি করলে ভালো হতো এইরূপ ধারণার জন্যেই এরা মানসিক শান্তিটুকু হারিয়ে ফেলে। ফলে মনস্তাপে ভুগতে হয়।  আর সবচেয়ে বড় কথা ের লোকের প্রভাবে পতিত হয় এবং তাদেরকে সর্বজ্ঞ মনে করে।  তাদের দ্বারাই পরিচালিত হয়।  এতে কন্যার জাতক জাতিকার ব্যাক্তিস্বাতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে ও পরের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হয়।  তবে স্বাভাবিক অবস্থায় অন্য রাশি বা লগ্নের জাতকদের তুলনায় ভালো ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার, বৈজ্ঞানিক, হতে পারে। কন্যার জাতকেরা দালালি করেও জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। হিসাব রক্ষক, ব্যাংকার,বীমাকর্মী, প্প্রভৃতিও হোতে পারে। আবার কিছু কুগ্রহের প্রভাবে পড়ে প্রতারক ও হতে পারে।

বিবাহ

কন্যার সপ্তমপতি হলেন দেবগুরু বৃহস্পতি, বুধ ও বৃহস্পতির সম্পর্ক ভালো নয়, কন্যার স্বামী এবং মীনের স্ত্রী হলে , স্ত্রী স্বামীকে বিশেষ স্নেহদৃষ্টিতে দেখেন কিন্তু উল্টো হলে ফল বিপরীত হয়।  লাভ ম্যারেজ করলে কন্যা বরের থেকে উঁচু জাতীয় হবে, তবে দাম্পত্য জীবনে এদের একটাই অশান্তির কারণ হতে পারে। সেটা কন্যার জাতক বা জাতিকা তার স্বামী।স্ত্রী কে বিনা কারণে সন্দেহ করে।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন