রত্নের ধারণা
চুনী (RUBY ):
রবিগ্রহের রত্ন চুনী।
প্রাপ্তিস্থান - মায়ানমার, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, আফ্রিকার টাঙ্গানিকা, দক্ষিণ ভারতের প্রভৃতি স্থানে চুনী বা মানিক পাওয়া যায়।
উপাদান - চুনী কোরান্ডাম শ্রেণীর পাথর, এলুমিনিয়াম ও অক্সিজেনের সংযোগে চুনী গঠিত হয়।
কাঠিন্যতা - ৯ মোহজ স্কেল
আপেক্ষিক গুরুত্ব - ৩.৯- ৪.১
প্রকৃতি - চুনী যথেষ্ট কঠিন পাথর এবং এটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ পাথর ফলে এর দ্যুতি বা উজ্জ্বলতা চমৎকার।
চূণীর বৈশিষ্ট - করতলে প্রতিটি গ্রহের ক্ষেত্র মূল্যবান, তবে বৃহস্পতি ও রবির ক্ষেত্রগুলিকে একটু বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, কেননা, জ্ঞান ও বিদ্যা এবং ধন ও ধর্মের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সুনাম ও সুখ্যাতি পছন্দ করে। রবি প্রধানত যশ ও খ্যাতি প্রদান করে। তিনি আলোক প্রদান করেন। আলো না থাকলে পৃথিবীর সব সৌন্দর্য ঢাকা পরে যায়। চুনী মহারত্নটি এই আলো প্রদানকারী রত্ন। রবিকে তুষ্ট করতে হলে চুনী ধারণ করতে হয়। জীবনে সুনাম অর্জন করতে হলে অন্যান গ্রহের কৃপাও যেমন পেতে হবে, তেমনি অক্লান্ত পরিশ্রম ও শুভ চিন্তা থাকায় আবশ্যক। এবং চুনী এই সুনামেরই দ্যোতক।
চুনীর প্রকারভেদ - পদ্মরাগ,কুরুবিন্দু,সৌগন্ধিক, নীলগান্ধীক প্রভৃতি।
মূল্য - ন্যাচারাল চুনী মোটামুটি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা রতিতে শুরু।
মুক্ত (Pearl ):
চন্দ্রের রত্ন হিসেবে মুক্ত ধারণ করা হয়।
প্রাপ্তিস্থান -পৃথিবীর প্রায় সমস্ত সাগর, উপসাগর, যদি ও জলাশয়ে মুক্ত জন্মায়। শ্রীলংকা, ভারত, চীন, মায়ানমার, আরব, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, সুইডেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে মুক্তার বাজার বিখ্যাত।
মুক্ত ধারণের প্রয়োজনীয়তা :
মুক্ত ধারণ করলে জাতকের দেহ ও মনের উন্নতি সাধিত হয়। এই রত্ন চন্দ্রের কুফল নাশ করে। আয়ুর্বেদ হতে মুক্ত ভস্ম একটি উত্তম ওষুধ রূপে ব্যবহৃত হয়। মুক্ত কোনো খনিজ পদার্থ নয় আবার পাথর ও নয়। তবু মুক্তকে রত্ন হিসেবে ধরা হয়েছে, কেননা মুক্তার অশেষ গুন্।
মুক্ত ধারণ করলে ঐশ্বর্য, সৌভাগ্য, সন্তান, শারীরিক দীপ্তি ও ধর্মলাভ ঘটে। এই রত্নটি সহজ লভ্য ও মানুষের পক্ষে পরম হিতকরী। কিন্তু সর্বাপেক্ষে সঠিক ও খাঁটি মুক্ত ধারণ বাঞ্চনীয়।
মুক্ত নবগ্রহের মধ্যে চন্দ্রের প্রতিকূলতা দূর করে। এছাড়া বৃহস্পতি গ্রহেরও প্রতিকূলতা দুর করে। যেসকল ব্যাক্তির জন্ম কুণ্ডলীতে চন্দ্রের কুদৃষ্টি দেখা যায় বা চন্দ্র দুর্বল হয় অথবা ডায়বেটিস, গোদ, মূত্রাশয়ের রোগ, প্রস্রাবের জ্বালা যন্ত্রনা, কুসংসর্গে পড়া, ভ্রষ্টাচার, অধিক মদ্যপান প্রভৃতি কুঅভ্যাস দূর করে। সোমবার চাঁদ ওঠবার পর সোনার আংটিতে মুক্ত বসিয়ে পুরুষেরা দেন হাতের তর্জনী ও মহিলারা বাম হাতের তর্জনীতে ধারণ করবেন। গলায়ও ধারণ করা যায়। এমনভাবে আংটি বানাতে হবে আঙুলের সঙ্গে স্পর্শ করে থাকে যেন।
প্রবাল (CORAL):
প্রবালের রাসায়নিক উপাদান - ক্যালসাইট।
আপেক্ষিক গুরুত্ব - ২.৬ - ২.৭
কাঠিন্য - ৩.৫ (মোহজ স্কেল)
প্রাপ্তিস্থান - ইতালির প্রবাল বিখ্যাত। এছাড়া শ্রীলঙ্কা, জাপান, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, স্পেন, আফ্রিকা প্রভৃতি দেশে প্রবাল পাওয়া যায়।
প্রবালের উপকারিতা -
জাতকের কোষ্ঠিতে মঙ্গলগ্রহ দোষযুক্ত হলে, প্রবাল ধারণে সেই সব কুপ্রভাব থেকে অনেকাংশে রেহাই পাওয়া যায়। খুন জখম, মারামারি, কাটাকাটি, মাথাগরম, শত্রূ ভয়, দুর্ঘটনা, অস্ত্রোপচার, ঝামেলা, মামলায় জড়িয়ে পড়া, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ায়, দুশ্চরিত্র হওয়া ইত্যাদি গ্রহ বৈগুণ্য প্রবাল ধারণে বহুলাংশে নির্ধারিত হয়। এছাড়া প্রবাল ধারণে ভালো যোদ্ধা, উত্তম শল্যচিকিৎসক, দক্ষ নির্মাণকর্মী ইত্যাদি হওয়া যায়। উপরন্তু প্রবাল ধারণে প্রবল উত্তেজনা, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি দূর করে, বিবাহ যোগ সন্নিকটবর্তী করে। এককথায় প্রবাল প্রায় সর্ব অমঙ্গল নাশ করে, জাতককে বীর্যবান করে, শরীরে লাবণ্য বৃদ্ধি ঘটায়। মৃগীরোগী, হিস্টিরিয়া প্রভৃতি রোগের ক্ষেত্রেও প্রবাল শুভকর। তাই মুক্তার ন্যায় প্রবালের ব্যবহার অধিক পরিমানে হয়ে থাকে।
বৈশিষ্ট -
প্রবাল নবরত্নের অন্যতম রত্ন হলেও অধিক পরিমানে পাওয়া যায় বলে এটি অল্পমূল্যে বিক্রি হয়। সাধারণ প্রবাল হলুদ বা ধূসর বর্ণের হয়, কিন্তু রত্ন বলে পরিচিত প্রবালের রং হলো কমলা, গোলাপি ও লাল। এদের Precious প্রবাল বলে।
পান্না (EMRERALD):
পান্নার উপাদান - বেরিলিয়াম, এলুমিনিয়াম, সিলিকন ও ক্রোমিক অক্সাইড।
আপেক্ষিক গুরুত্ব - ২.৬ - ৩.৮
পান্নার বিচ্ছুরণ - ০.০১৪
পান্নার কাঠিন্য - ৭-৮ (মোহজ স্কেল )
প্রাপ্তিস্থান - ভারতবর্ষের কাশ্মীর ও বিন্ধপর্বত, পাকিস্তান, রাশিয়া, পূর্ব জার্মানি, মিশর, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া ইত্যাদি দেশ।
পান্নার উপকারিতা -
পান্না ধারণ করলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে পান্নাকে হৃদপিন্ড, মস্তিস্ক এবং যকৃৎ প্রভৃতির শক্তিদায়ক বলা হয়েছে। যেসকল ব্যাক্তির জন্মকুণ্ডলীতে বুধের কুদৃষ্টির কারণে রোগব্যাধি হয়, তিনি পান্না আংটিতে বসিয়ে ধারণ করলে রোগ আরোগ্য হয়। স্ত্রী পুরুষের মধ্যে স্থায়ী প্রেম রাখার জন্য পান্না ধারণ আবশ্যিক। স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে, লেখাপড়া স্মরণ রাখার জন্য পান্নার ব্যবহার করা হয়। ক্ষতি বা মন্দার মুখে পড়লে পান্না ব্যাবহারে সুফল মেলে।
পান্নার প্রকৃতি -
পান্না বেরিল শ্রেণীর যথেষ্ট কঠিন পাথর এবং এটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ পাথর, ফলে এর উজ্জ্বলতা বা দ্যুতি চমৎকার। পান্না মহার্ঘ রত্নগুলির মধ্যে অন্যতম রত্ন।
বৈশিষ্ট -
অতীতে ধন্ন্যাঢ্য ও বিজয়গর্বী রাজাদের নিকট পান্না প্রিয়রত্ন বলে পরিচিত ছিল। এই রত্ন ধারণে জ্ঞানের উদয় হয়, জাতকের ধর্মবোধ জাগিয়ে তোলে এবং দান ধ্যানের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি করে। পূর্বকালে বলা হতো, যে রাজা এই রত্ন ধারণ করেন তাঁর হস্তী, অশ্ব, রথ প্রভৃতি লাভ হয় এবং তাঁর রাজ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি ঘটে। এছাড়া পান্না একটি বুধিকারক রত্ন, শোভনতায় পান্নার তুলনা নেই।
পোখরাজ (TOPAZ ):
পোখরাজের উপাদান -
Fluorine, এলুমিনিয়াম ও সিলিকন।
প্রাপ্তিস্থান - ভারতবর্ষ, শ্রীলংকা, জাপান, ব্রাজিল, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, মায়ানমার ইত্যাদি দেশ।
স্বচ্ছতা - সম্পূর্ণ স্বচ্ছ
আপেক্ষিক গুরুত্ব - ৩.৯- ৪.১
কাঠিন্যতা - ৯ (মোহজ স্কেল)
বিচ্ছুরণ - ০.০১৪
কার্যকারিতা - পোখরাজ ধারণ করলে বৃহস্পতির দোষ খণ্ডিত হয়, জাতক আয়ু, লক্ষ্মী ধীশক্তি লাভ করে এবং জাগতিক বিবাদ থেকে মুক্ত হয়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বলা হয়েছে, পোখরাজ অম্লরস ও বাত ইত্যাদি রোগ নাশ করে এবং আয়ু, প্রজ্ঞা ও শ্রীবৃদ্ধি কারক হয়।
বৃহস্পতি যাদের দুর্বল, সেইসব মানুষ মামলাবাজ হয়ে যায়। মোকদ্দমাবাজিতে সে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়ে। অত্ত্যন্ত বাচাল হয়। নিজেকে সর্বদা যোগ্য ও বুদ্ধিমান মনে করে এবং অপব্যায়ী হয়। এদের দেহে মেদ বৃদ্ধি হয় ও যকৃতের রোগ, গ্রন্থি বেদনা, গলায় রোগ, টাইফয়েড জ্বর, দাঁতের রোগ, আমাশয়, স্নায়ুরোগ, অনিদ্রা,প্রদর, মাথার যন্ত্রনা, মৃগী, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি রোগ আক্রমণ করে।
এইকারণে উপরিউক্ত রোগ হলে অথবা রোগীর রাশিতে বৃহস্পতি দুর্বল হলে পোখরাজ ধারণ করলে অব্যাহতি পাওয়া যায়।
হীরা (DIAMOND):
হীরার উপাদান :
হীরা হলো কার্বন (C ) নামক মৌল পদার্থের রূপান্তরিত রূপ।
প্রাপ্তিস্থান :
ভারত, দক্ষিণআফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, আমেরিকা ইত্যাদি দেশ।
কাঠিন্য - ১০ (মোহজ স্কেল)
আপেক্ষিক গুরুত্ব - ৩.৫
বিচ্ছুরণ - ০.০৪৪
কার্যকারিতা :
শুক্রের প্রতিকার রূপে হীরা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কারণ হীরা জীবনের কারক, যৌবনের কারক ও জন্মের কারক। এছাড়া সৌন্দর্যের কারণে অলংকারে হীরা ব্যবহার করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে , আভিজাত্য প্রকাশের কারক হিসেবে এবং লোভনীয় বস্তু হিসেবে হীরা সংগ্রহ করা হয়। আবার বৈজ্ঞানিক কারণেও হীরার ব্যবহার লক্ষণীয়। কাঠিন্নতার কারণে হীরের গুঁড়ো দিয়ে হীরেকে ঘষা হয়। আর কোরান্ডাম, টোপাজ প্রভৃতি রত্ন পাথর ঘষতেও হীরার গুঁড়া ব্যবহার করা হয়। কাঁচ কাটতে বা শক্ত পাথরকে, ধাতুকে ছিদ্র করতেও হিরে ব্যবহার করা হয়। অস্বচ্ছ শ্রেণীর হীরক "carbonado " ব্যবহার করা হয়।
জ্যোতিষীদের মতে যেসব রোগীর রাশিতে শুক্র দুর্বল, সেই সব ব্যাক্তিরা সাদা উজ্জ্বল হীরা ধারণ করলে শুভ ফল পেয়ে থাকে। শুক্রের প্রভাবে যেসকল রোগ হয় সেইসব দূরীকরণ করে হীরা। যেসকল ব্যাক্তির শুক্রের প্রভাব অশুভ অর্থ্যাৎ কুপ্রভাব রয়েছে তাদের শুক্রবার দিন প্রাতঃকালে স্নান করে নিজ ধর্মানুসারে ঈশ্বরকে স্মরণ করে হীরার আংটি ধারণ করা উচিত।
নীলার উপাদান :
এলুমিনিয়াম অক্সাইড (Al2O3)
প্রাপ্তিস্থান :
কাশ্মীর, শ্রীলংকা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশ।
নীলার আপেক্ষিক গুরুত্ব : ৩.৯ - ৪.১
নীলার কাঠিন্য : ৯ (মোহজ স্কেল)
নীলার বিচ্ছুরণ : ০.০১৪
কার্যকারিতা :
শনির অশুভ ফল দূর করতে এবং শনি প্রভাবিত কঠিন রোগের উপশমের জন্য নীলা মহারত্নটি ২ রতি থেকে ৭ রতি পর্যন্ত ধারণ যোগ্য। নীলা ধারণে রাজতুল্য ঐশ্বর্য ও মহাসাধক হওয়ার গুন্ লাভ করা যায়।
যে ব্যাক্তির রাশিতে শনির কুদৃষ্টি থাকে বা শনি অশুভ অবস্থায় থাকে তারা নীলা ধারণ করতে পারেন। শনির নিম্নদৃষ্টিতে মানুষ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। আয় উপার্জন কমে যায়, অর্থহানি ঘটে, প্রত্যেক কার্যে বাধা এবং ক্ষতি হয় সেই সকল ব্যাক্তি নীলা ধারণ করলে সুফল পেয়ে থাকবেন। নীলা মানুষের মধ্যে শুদ্ধ ও পবিত্র বিচারশক্তি প্রদান করে। একাগ্রতা বাড়ায়, মানসিক শান্তি প্রদান করে এবং কুবিচারকে দূরীভূত করার জন্য নীলার গুরুত্ব অপরিসীম। নীলা ধারণের ফলে শত্রূ ও মিত্রে পরিণত হতে পারে। তবে শুদ্ধ ও পরিষ্কার নীলা ধারণ কর্তব্য। অন্যথায় হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন